“Successful Event হলো”, ভুল বললাম,লাইনটাকে এইভাবে পড়ুন-প্রত্যেকের দেওয়া সঠিক অঙ্কের অর্থ সঠিকভাবে,প্রয়োজনীয় একটা জায়গায় সদ্ব্যবহার করা হলো,ব্যস এইটুকুই! বাদবাকি পুরো জায়গা জুড়েই অপূর্ণতা। Google Map এ গিয়ে “G-plot, Sundarban” লিখে সার্চ করুন দেখাবে, “Can’t find a way there”। মানচিত্রের একেবারে শেষদিকের বিচ্ছিন্ন একটা ব-দ্বীপ,বিচ্ছিন্ন এই অর্থে, কারণ স্থলপথের যেখানে আপনি যাত্রা শেষ করবেন সেখান থেকে জলপথে প্রায় দেড় ঘণ্টা,পৌঁছবেন যানজটহীন,বিদ্যুৎহীন রুক্ষ একটা জনবসতিতে। না!এত অবধি পড়ে যতটা মুখ হাঁ করা ভাব করছেন ঠিক ততোটাও নয়,ঝাঁ-চকচকে রাস্তা আছে, ইস্কুল আছে,স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। ব্যাস,আর কি চাই!!
জানেন! ওদের বেশির ভাগই জীবন-জীবিকার জন্য ওই দূরের সুন্দরী,গরান,গেওয়ার ডানা ছাঁটাতে যায়,জঙ্গলের চাক থেকে মধু সংগ্রহ করতে যায়,তবে মাঝে মাঝে ঘরে ফেরে না। বছরে দু-একজন মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েই থাকে,…রয়েল বেঙ্গল টাইগার!!এই তো সেদিন একজন সৌভাগ্যক্রমে বাঘের কবল থেকে ফিরে এসেছে, তার ঘাড়ের কাছে থাবার ক্ষতচিহ্নটা দেখার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছিল যদিও।এদিকে অন্য একটা জীবিকার মধ্যে নদীতে মীন,মাছ,কাঁকড়া ধরা তো রয়েছেই,এক একটা জলজ্যান্ত মানুষ কুমিরের দ্বারা লোপাটও হয়ে যায় কখনও কখনও। তবুও জীবিকা ছাড়া জীবন বাঁচে কি করে!
আমরা গিয়েছিলাম আদিবাসী অধ্যুষিত একটি এলাকাতে, প্রয়োজনীয় বেশ কিছু জিনিস নিয়ে,আর এবারে আমরা আমাদের সাধ্যমতো এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জিনিস নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন এর চেয়ে দশগুন বেশি জিনিস নিয়ে গেলেও ওদের সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে,নিজেরা ‘বেশ ভাল কিছু করেছি’ ভাব নিয়ে ফিরে আসতে পারতাম না। আরে যেখানে ওরা দু’বেলা ভালো করে খেতে পায়না,সেখানে ছাতার মাথা জামাকাপড়, খাতা-পেন, মশারী, কম্বল, ইস্কুল-ব্যাগ নিয়ে কি করবে বলুনতো? শিক্ষা জিনিসটা ওদের কাছে মাথার ওপর বোঝার মতো।যদিও কয়েকটা বাচ্চা ইস্কুলে আসে,মিড-ডে মিলের লোভে। ও হ্যাঁ ইস্কুলের প্রার্থনার পরে বাচ্চাগুলোকে দিয়ে কি বলানো হয় জানেন?
।।”ধ্বংস হোক সব জীবাণু,
জব্দ হোক হাহাকার,
পুষ্টিকর খাদ্য চাই,
সব মনে, সব প্রানে
শুরু হোক বাঁচার লড়াই”।।
-নির্মল বাংলা গড়ার শ্লোক এটা। একটু ফিকে লাগছে না কথাগুলো শুনতে? জানিনা আমাদের দেওয়া কয়েকটা সাবান কতগুলো জীবাণু ধ্বংস করবে বা কয়েক কেজি ছোলার ছাতু কতটুকু পুষ্টি দিতে পারবে ওদের। আমরা একটা ভুল করে এসেছি জানেন! পুষ্টিগত গুনাগুনের ঊর্ধে গিয়ে দশজন গর্ভবতী মা’কে women’s Horlicks দিয়েছিলাম,আর সেটা দিতে গিয়ে আমরা মিথ্যে করে বলেছিলাম “এগুলো ওষুধ, এগুলো শুধু আপনারাই খাবেন,অন্যকে দেবেন না”। আমরা মিথ্যে বলেছিলাম, পাছে খিদের জ্বালায় অন্য কেউ না ওটা খেয়ে নেয়। আর Toothpaste, Brush বিলি করার সময় জানলাম ওদের অনেকেই এগুলো প্রথমবার দেখছে। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কয়েকটা Sanitary Napkin নিয়ে গিয়েছিলাম,সেটা দেওয়ার আগে আমাদের সদস্যারা ওগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞাত করার জন্য একটা সচেতনতা-মূলক বক্তব্য শুরু করে কিন্তু এক লাইন শোনা মাত্রই সামনে থেকে সোচ্চার “আমরা ওগুলো চাইনা,আমরা শাড়ি,মশারি,কম্বল চাই”। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইতিমধ্যে আমরা ওই সমস্ত জিনিস বিলি করে দিয়েছিলাম,অবশিষ্ট ছিল না কিছুই।আমরা আশ্বস্ত করলাম পরের বার আবার আসব বলে।
জায়গার খোঁজটা পেয়েছিলাম Nandini,অর্পিতার কাছ থেকে এবং জায়গায় গিয়ে কাজ করার সাহস পেয়েছিলাম অর্পিতা(স্বাস্থ্যকর্মী),ওখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশাদিদি ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য কারণ ওরা না থাকলে 200-250 গ্রামবাসীকে নির্ঝঞ্ঝাটে সমস্ত জিনিস দেওয়া সম্ভব হতোনা কখনোই । ওরাও স্বপ্ন দেখে ওখানকার সার্বিক উন্নতির, লড়াই করে রোজ।শিক্ষার পর্যাপ্ত আলো না পৌঁছনোর জন্য ওখানকার মানুষরা বোঝেনা নিজেদের ভালটুকুও,ওরা মেরে ফেলার হুমকি দিলেও তাই আশা দিদিরা জোর করে ওদের কোলের বাচ্চা ছিনিয়ে নিয়ে পোলিও খাওয়ায়, ইনজেকশন দেয়, ওষুধ খাওয়ায়।ভালোবাসা ওদের সকলকে, ওদের লড়াইয়ে আমাদেরও একদিন সামিল করার জন্য এবং সাধুবাদ রোজ দিন এই লড়াইটাকে জারী রাখার জন্য।
জানি এতবড় লেখা খুব কম জনই শেষ পর্যন্ত পড়ার ধৈর্য রাখবে,আর সেই জন্যই এটা একটা লড়াই। ভালো থাকুন সকলে,নগর জীবন আপনাদের ভালো কাটুক।এবারের ‘সত্তরের সুমন live’ মিস হলে ‘একাত্তরের সুমনে’ যাওয়া হোক। ওদের নিয়ে শুধু ডকুমেন্টারি হোক,সিনেমা হোক,চলুন আমরা বরং Popcorn খেতে খেতে,চোখের জল গড়াই। আসলে দুটোর স্বাদই নোনতা, আমাদেরটাতে ‘বিনোদন’ জন্মায়,আর ওদেরটাতে “ম্যানগ্রোভ অরণ্য”।