
পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার শবরদের গ্রামাঞ্চলের প্রেক্ষাপট ঠিক এমনটাই। ভোটপূর্ব সময়ে দানধ্যানের পাশাপাশি ভোটপ্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির আনাগোনা যেমন বাড়বাড়ন্ত তেমনি বছর ঘুরতেই তাদের দেখা পাওয়াই ভার। এ হেন পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে ঘুলঘুলি ও প্রতিজ্ঞা ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এবছর বেশ কিছু শবর পরিবারের সদস্যদের স্ব-নির্ভর করার উদ্দেশ্যে ছাগল, হাঁস ও শুকর জাতীয় গবাদি পশু দেওয়া হয়, যাতে তাদের কারোর সাহায্যের ওপর নির্ভর না করতে হয়।
প্রতিজ্ঞা ফাউন্ডেশন নির্মিত “হাতেখড়ি” পাঠশালার সাফল্য শুধুমাত্র তাদের বাচ্চাদের ভিড়ে বা স্কুলছুটের সংখ্যার শূন্যতা দিয়ে মাপা যায় না, অনেক প্রচেষ্টার পর বাচ্চাদেরকে ‘তাড়ি’র (এক ধরনের পানীয়) প্রভাব থেকে মুক্ত করা, বা গ্রামের লোকেদের পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অন্যান্য রাজ্যে চলে যাওয়া আটকানোর পর তাদের এবং তাদের পরিবারকে হাতের কাজে উৎসাহিত করা, এবং তাদের বানানো হস্তশিল্প রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন হায়দ্রাবাদে, চেন্নাই, দিল্লীর হস্তশিল্প মেলায় পাঠানো, এই সবটাই করার কারণ ওদের একটাই লক্ষ্যে, ছেলেমেয়েগুলো যেন একটু ভালোভাবে পড়াশোনা শিখতে পারে, সুন্দর ভবিষ্যৎ পেতে পারে। এবং এইসব প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ রানী রানী শবর ও অঞ্জলি শবর হুড়া জেলার সরকারি স্কুলে 60% এবং 67% নাম্বার পেয়ে পাস করেছে গতবছর। হ্যাঁ, নাম্বারটা হয়তো আমার আপনার চোখে খুব বারাবাড়ি করার মতো কিছু নয়, কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে তারা এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছে যেখানে বিশুদ্ধ পানীয় জল একটা বিলাসিতা মাত্র। সেখানে ‘হাতেখড়ি পাঠশালা’-তে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে পরিচিতি ঘটিয়ে জেলার অন্য মেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা করা, একসাথে পড়াশোনা করাটা অনেক বড় কিছু। ঘুলঘুলি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিজ্ঞা ফাউন্ডেশনের পাঠশালার পাশে দাঁড়ানোর। আপনারাও সাহায্য করুন এবং এগিয়ে আসুন যাতে আগামীদিনে আরও অনেক অনেক রানী ও অঞ্জলিদের চলার পথটা একটু মসৃণ হতে পারে।
-Avik Das