পশ্চিম বাংলার বাসিন্দা হয়ে ‘শবর’ শব্দটির সাথে পরিচয় নেই এরকম লোক খুঁজে পাওয়া ভার। ইতিহাসের পাতায় হোক অথবা সাহিত্যের কথায়, এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের উল্লেখ আছে বারবার। মূলতঃ পশ্চিমবঙ্গ কে আদি বাসভূমি বলা গেলেও আশেপাশে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ডেও ভিন্ন নামে এরা বর্তমানে বসবাস করছেন।
আমাদের পুরুলিয়ার বুকে মোট ১৬৫ টি শবর পল্লী কে আজকের দিনে খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যেই একটি পল্লী অবস্থিত দামোদরপুর এলাকায়।
ব্রিটিশদের মার্কা মারা ‘ক্রিমিনাল ট্রাইব’ এর তকমা স্বাধীন ভারতীয় সরকার ১৯৫৬ তে নাকচ করে দিলেও পল্লীর অন্তরে প্রবেশ করলে নির্দ্বিধায় মনে হতে পারে সময় ওই ১৯৫৬ তেই থমকে আছে।
স্বাধীনতার ষাট বছর পরেও এইরকম ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি সময়ের কালে ক্ষমতায় আসা সমস্ত সরকারের ঔদাসীন্য আপনাকে অবাক করতে বাধ্য।
তা ছাড়াও, পার্শ্ববর্তী জনবসতির মধ্যেও এনারা যে কোনোরকম বৈষম্যের শিকার হন না, সেটা ভাবলে অত্যন্ত ভুল ভাবা হবে।
ভোটের আগে ছাড়া এই সম্প্রদায়ের উন্নতির কথা ভাবার মত অবকাশ হয়তো সবার থাকে না। আর সরকারী ত্রাণ এলেও সেটা সঠিক জায়গায় কাজে লাগানোর মত বিশ্বস্ত লোক বা সংগঠনের অভাব।
এমনই সব প্রতিকূল পরিবেশে নজরকাড়া কাজ করেছে ‘প্রতিজ্ঞা’।
অকুড়বাদে একটি ১১০ জন ছাত্রছাত্রী কে নিয়ে স্কুল স্থাপন থেকে শুরু করে সেইখানকার লোকজন কে সুপথে এনে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রচেষ্টা এবং সফলতা আমাদের মুগ্ধ করে।
বর্তমানে আমাদের ইভেন্টটি যেইখানে হল, যেইখানে আমরা ১৩৪ জন শিশুর হাতে শারদীয়ার মরসুমে তুলে দিতে পারলাম কিছু নতুন জামা কাপড়, সেইখানেই ‘প্রতিজ্ঞা’ আরেকটি স্কুল স্থাপনের অঙ্গীকারে বদ্ধপরিকর। এই দামোদরপুরের স্কুলটিতে প্রায় ১৭৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।
স্কুলটির প্রধান উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া অবহেলিত শবর গোষ্ঠীর শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্যে তৈরি করা এবং সরকারি ছাত্রাবাসে তাদের স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া মাত্র।
আজ আমরা দুর্গা পুজোর আবহে যাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি, অদূর ভবিষ্যতে যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেই দায়িত্ব টুকু আমাদের নেওয়া উচিত বলেই হয়তো আপনারা, ঘুলঘুলির শুভাকাঙ্খীরা, পরবর্তী কালে আরো ইভেন্ট আশা করতে পারেন দামোদরপুর শবর পল্লীতে।
যে কাজ মহাশ্বেতা দেবী তার জীবনকালে শুরু করে গিয়েছেন, সেই কাজের ভার টুকু আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে না নিলে, তাদের হয়তো আরো বছর ষাটেক অপেক্ষা করতে হবে শুধুমাত্র বিদ্যুতের মতো সাধারণ কোনো দরকার টুকু পেতে।