“আয়লা”র ডানা ঝাপ্টানোয় ক্ষতচিহ্নটা ভালোমতো শুকোয় নি এখনও| জীবনযাত্রা?স্বাভাবিক,ঐ আগের মতোই অভাবে ভরপুর! ঘরগুলোর সাঁতরে হারিয়ে যাওয়ার পরে নতুন নতুন ঘর হয়েছে যদিও কিন্তু কি জানি ঠিক ঘরের মতো ঘর নয় ওগুলো….কেমন আছে ঐ ঘরের মধ্যেকার মানুষগুলো? প্রতি মাসে বরাদ্দ দুটাকা কেজি দরে ষোলো কেজি চালে কতটুকু সুরাহা ঘটে আর! ওদের প্রাপ্যটুকু থেকে অনেকটাই বঞ্চিত ওরা,তাই একদিন শহর থেকে ১০০ কিমি পথ পেরিয়ে কয়েকটা শাড়ি,জামা,প্যান্ট,গেঞ্জি,ধুতি,পাঞ্জাবি,লুঙ্গি দিয়ে এসে কতটুকুই বা আচ্ছাদন দিতে পারি আমরা ওদের ঐ এক পোশাকি জীবনযাত্রায়?কয়েকটা বেডশিট কতটাই বা শৌখিন করবে ওদের বিছানা কে?পাঁচ-ছয় জনের পরিবারে একটা করে মশারি দিয়ে নিরাপদে ঘুমোতে যাওয়ার আশ্বাস দিতে পারি কি?তবুও ঐ খানিকক্ষণের একটু হাসি দেখবার জন্য এগিয়ে আসা,হাতে হাত ধরা! সামান্য কিছু একটা পাবে শুনে ছুটির দিনেও বাচ্চাগুলোর আমাদের আগেই পৌঁছে গিয়ে হই-হুল্লোড়,অদ্ভুত একটা খারাপ লাগা তৈরি করেছিল আমাদের মধ্যে,কি ই বা এনেছি ওদের জন্য!কয়েকটা খাতা,পেন,চকোলেট আর ছাতা কতটাই বা ওদের আনন্দটা জিতিয়ে রাখার মতো|তার উপর আবার আমাদের প্রতি বাচ্চাদের সংবর্ধনার উদ্যোগ,আমাদের কে সেদিন পরাজিত করেছিল,সামান্য কিছু পেয়ে বয়স্ক মানুষদের হাতগুলো আমাদের মাথায় ঠেকিয়ে প্রাণোচ্ছল বার্তা -“তোমরা অনেক বড় হও” আমাদের বড় হওয়ার তাগিদ টাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে!
প্রথম পর্বের পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিনিস পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়া হলো,জানলাম সুখেন আর দুখেন না খেয়েই স্কুলে গিয়েছিল,ফিরে এসে দুই ভায়ে মিলে পান্তা ভাতে ডাল মাখিয়েছে,ওদের বাড়ি থেকে কিছুটা পরে দেখলাম ত্রিপল দিয়ে ছাউনি দেওয়া কয়েকটা ঘরের মাথাতে ত্রিপল ফেটে “ঘুলঘুলি”আঁকা,হয়তো আমাদের দেওয়া ত্রিপল গুলো এবারের বর্ষা থেকে একটু খানি আগলে রাখবে ঘরগুলোকে…
সূর্য টা এবার একটু পশ্চিমে হেলতে শুরু করলো,দিনের শেষ আলোর আভাটা,কুড়ে ঘরগুলোর ধূসর খড়গুলো কে শেষ বারের মতো চিনিয়ে দিয়ে লুকোতে যাচ্ছে,সঙ্গে লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষগুলোর অভাব-অনটনকে!এগিয়ে চলা,ওদের অধিকারটা চিনিয়ে দিয়ে আমাদের এগিয়ে চলা,হয়তো ওদের স্থায়ী সুরাহা না করে ফিরে আসাটা আমাদের ব্যর্থতা তবুও ঐ অধিকার বোধের লড়াই এ আমাদেরও একটু সামিল হওয়া….
ধন্যবাদ সমস্ত সাথীদের,যারা আমাদের হাতটাকে আরও শক্ত করে ধরার সাহস যুগিয়েছে,এগিয়ে এসেছে তাদের সামর্থ্য টুকু নিয়ে,ধন্যবাদ ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের,শিক্ষকদের যারা এই উদ্যোগটির সফলতার জন্য পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন,ধন্যবাদ কলেজের শিক্ষকদের যারা পাশে এসেছেন,পরামর্শ দিয়েছেন ভবিষ্যতে আরও কিছু করবার|