“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য”। যদিও মানুষের এখন খুব ব্যস্ত জীবনযাত্রা,সবাই শুধু ছুটছে। কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝেও কিছু সময় ঠিকই আমরা নিজেদের জন্যে রেখে দিই। আচ্ছা আমরা তার থেকেই অল্প কিছুটা সময় কি সমাজের কিছু মানুষদের সাথে ভাগ করে নিতে পারিনা..? হ্যাঁ পারি.! অবশ্যই পারি.!
আমরা একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমাদেরই চার পাশে থাকা কিছু মানুষ যারা নিজেদের সব টুকু দিয়ে পশ্চিম দ্বারকাপুরের মতো পিছিয়ে পড়া,অনুন্নত একটি আদিবাসী গ্রামের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শিক্ষা দান করে চলেছেন, এমনকি অনেক অনাথ বাচ্চাদের আশ্রয় ও দিয়েছেন এই বিদ্যালয়ে। আর তাদেরকে দেখেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৩ জুলাই ভোর ৩:৩০ টে নাগাদ রওনা দিই, সুন্দরবন জেলার ওই আদিবাসী গ্রামটার উদ্দেশে, এবং প্রায় সাড়ে সাত ঘন্টা যাত্রা শেষে, আমরা বেলা ১১ টার দিকে ওখানে পৌঁছাই। আমাদের খুব অবাক করে দিয়েই ওরা আমাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে স্বাগত জানায় তাদের অঞ্চলে।ওখানে গিয়ে আমরা শিখলাম এত দুঃখ-অভাবের মাঝেও কিভাবে ভালোবেসে হাসি আনন্দে একসাথে বাঁচা যায়।ওই দিন আমরা আমাদের সামর্থ্য মতো ওই গ্রামের মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী যেমন মশারী,বিছানার চাদর নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আমরা ইস্কুলের বাচ্ছাদের স্কুল-ব্যাগ গুলো দিই। তাদের মুখের হাসি যেন সারাদিনের পুরো ক্লান্তি টা কে নিমেষের মধ্যে উধাও করে দিলো।
ইস্কুলটার চারিদিকে অনেক গাছপালা, সবুজে ঘেরা পুরোটা, কংক্রিটের পৃথিবী দেখা শহুরে চোখটা শান্তি পায় যেন,ক্লান্তি কমে আসে কেমন।
ক্লান্তি তো কমাতেই হতো, কারণ এবার ফেরার পালা… কলকাতা ফিরতে হবে।
প্রায় বেলা ২:০০ নাগাদ আমরা আবার একটা মোটর ভ্যান এ করে বেরিয়ে পরলাম। প্রথমে ওই বাচ্চাগুলোর মুখ,তারপর ইস্কুল,অতঃপর গ্রাম, সবুজ ছাড়িয়ে আমরা এগিয়ে চললাম বাসষ্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে…ঘন্টাখানেক বাসযাত্রার পর স্টেশন থেকে নির্ধারিত ট্রেনে চড়লাম কলকাতার উদ্দেশ্যে… ট্রেনে যেতে যেতে বারবার ওদের কথা মনে পড়ছিল, ওদের অনাড়ম্বর দিন যাপনের কথা মনে পড়ছিল, ওদের অতিঅল্পেই সন্তুষ্ট মুখ গুলোর কথা মনে পড়ছিল আর মনে পড়ছিল ওখানকার শান্ত সবুজ পরিবেশের কথা…যেটা এক অভূতপূর্ব শান্তি দেয়।
জায়গার নামটাই তো তাই… ‘সুন্দরবন’।